নাফ পিতা দানবীর এজাহার মিয়া কোম্পানীকে স্মরণ!

এম. এরশাদুর রহমান :

আমাদের কাছে এজাহার মিয়া কোম্পানী একজন দানবীর হিসেবে খুবই পরিচিত। টেকনাফের নাম উচ্চারণের সাথে সাথেই যে মানুষটির ছবি স্মৃতিপটে ভেসে উঠে তিনি হলেন এজাহার মিয়া কোম্পানী ।

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীহীন মানুষের মধ্যে তিনিই এত যে মেধাবী ছিলেন তা কল্পানা করা যেতনা।তার জানার পরিধি পরিমাপ করার মত বিদ্যা কারো নেই বিধাতাই জানেন যে তাকে কত বিদ্যা দান করা হয়েছে।

একজন মানুষ নিজের সাধনায় প্রচেষ্টায় একেবারে কাদা মাটি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, তার সংগ্রামী জীবন থেকে আমাদের অনেক শেখার ,অনেক জানার আছে।কিভাবে টাকা আয় করতে হয় তা আবার কোথায় ব্যয় করতে হয় তা তিনি জানতেন ।তার জন্ম মুলত টেকনাফে,অন্য দশজন ছেলের মত তিনিও বড় হয়েছেন গ্রামে ডাংগুলি ,হাডুডু,ফুটবল,লুকোচুরি,কানামাছি, পুকুর খাল ও নাফনদীতে সাঁতার কেটে।বড় হওয়ার পর তিনি দেখলেন টাকা বিহীন এই পৃথিবীর সকল কিছুই ফাঁকা ।

তাইলে কি করা যায়? বুদ্ধি আঁটলেন ,ঠিক একটি ভালো বুদ্ধি তার মনে ধরা দিলেন বললেন যাও ব্যবসা করে খাও,আর পিছনে ফিরে থাকাতে হবেনা ।সত্যিই তাকে আরকোন দিন পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি ।এগুলেন তিনি সামনে অনেক দুর এগুলেন সফলতার স্বপ্ন আকাশে তিনি হাত দিয়েছেন । তার সীমাহীন প্রচেষ্টায় টেকনাফে লবণ উপাদন শুরু হয়েছিল।

তিনি নিজেই লবণমাঠ ঘুরে ঘুরে ‍দেখতেন শ্রমজীবি মানুষের কাজের ধরণ।তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টেকনাফে চিংড়ি উৎপাদন মৎস্য সম্পদ আহরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য সস্প্রসারণ হয়েছিল এককথায় বলা যায় তিনিই ব্যবসায়িক চক্ষু খুলে দিয়েছিলেন ।তার দেখানো পথে চলে টেকনাফের মানুষ আজ অনেক এগিয়ে ,তিনি শ্রমিকদের শ্রমের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়েদিতেন ।

দান করলে মান বাড়ে সে কথাটি যাদের বিশ্বাস হবেনা তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনি আমাদের এজাহার মিয়া কোম্পানীর জীবনী খুলে দেখুন দানের কারণে তার মান অনেক অনেক বেড়েছে, একজন ঢাকায় গিয়েছিলেন জনৈক ব্যক্তিপ্রশ্ন করলেন বাড়ী কোথায়? বললেন টেকনাফ ,তখন প্রশ্নকারী বললেন এজাহার কোম্পানীর শহরে ? তার কথা থেকে বুঝা যায় কোম্পানীর পরিচিতিটা কত বড়! তিনি কত বড় মাপের মানুষ ‍ছিলেন পুরো শহরটা তার নাম দিয়েই পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

তবে এখন কি কম! তার সোনার চাঁদ ছেলে আবদুর রহমান বদি কক্সবাজার-৪ আসনের দুই দুই বারের সাংসদ,সারা বাংলাদেশর আলোকিত একজন এম,পি,তার ছোট ছেলে মাওলানা মুজিবুর রহমান টেকনাফ পৌর সভার একজন সফল পেনেল মেয়র ও এজাহার কোম্পানীর ভাই টেকনাফ পৌরসভার মেয়র মোঃ ইসলাম। হয়ত তিনি এখনো বেঁচে থাকলে আরো অনেক কিছু দেখে যেতে পারতেন ।

তিনি একজন মানব দরদী মানুষ ছিলেন ।কাউকে তিনি কোন দিন খালি হাতে ফেরৎ দিতেননা ।

ইসলামের একটি বাণী যাকাত দিলে মাল বৃদ্বি পাই সেটা যাদের সহজে বিশ্বাস হবেনা তাদের বলতে চাই এজাহার মিয়ার দিখে তাকাতে ,দান যাকাত দিতেন বলে তার মাল দিন দিন বেড়ে গিয়েছিল ,এমনকি তার পরিবার পরিজন ছিল অনেক ,রাজনীতির মারের কারণে অনেক বার তিনি কারাযবনিকার অন্তরালে ছিলেন ।

তার কথা চলন বলন আচরণউঠা বসা ছিল সাধারণ।তার মাঝে কোন আমিত্ব ভাব ফুটে উঠেনি। তিনি গরিব মানুষের কথা খুব কাছে গিয়ে শুনতেন ,তাকে মানুষ তার মনের দুঃখ বুঝাতে পারতেন ।তিনি যা খেতেন অপরকে তাখাওয়াতেন তিনি এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না আলেমওলামাদের কথামত চলতেন । মনে পড়ে ১নং হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ নিবাচনে চেয়ারম্যান পদে মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী ও বহুবার নিবাচিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর মাঝে তুমুল লড়াই কি হবে কি করবে !

আমার শিক্ষক আধ্যাপক গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী বুদ্বি করে তার শাশুড় এজাহার মিয়া কোম্পানীকে আনোয়ারীর পক্ষে আনলেন ,জনসভায় এজাহার মিয়া কোম্পানী বলেছিলেন আমি আলেমদেরকে সম্মান করি আপনারাও এই আলেম কে সম্মান করে ভোট দিবেন ,তার সেই কথায় মানুষ আনোয়ারীকে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নিবাচিত করলেন সেই দিন সে কথাটি না বললে আনোয়ারী চেয়ারম্যান হতকিনা সন্দেহ ছিল ।

এজার ভেজার হলেই শেষ! এজাহার মিয়া কোম্পানী যার পক্ষে যাবে সেই এমপি, সেই চেয়ারম্যান। তিনি যাদের বিপক্ষে যাবে তাদের জীবন শেষ ,অর্থাৎ এজার ভেজার হলেই শেষ।

টেকনাফের শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদুত 

আমরা কোম্পানীকে টেকনাফের শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদুত এই জন্যে বলি যে ,তিনি তার নামে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।নিজের আদরের স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন মলকা বানু উচ্চ বিদ্যালয়। টেকনাফে এমন কোন শিক্ষা নিকেতন নেই যেখানে এজাহার মিয়া কোম্পানীর জমি নেই।

তিনি ছিলেন গরীবদের আপন জন। গরীবের কথা সদা আজীবন ভেবেছিলে, যা ছিল তাহা দুই হাতে ই দিয়ে দিলে। তারি মত প্রতি উপজেলায় একজন করে যদি হত পথে পথে ভিক্ষুক দেখা যেতনা শত। দুই ঈদে তিনি মুক্ত হস্তে দান করতেন রমজান মাসে তার দরজা সবার জন্য খোলা ছিল।

তিনি একজন খোলা মনের মানুষ ছিলেন ।কথায় কথায় বলতেন লোকে তিনি মাটি ধরলে সোনা হত।

মুলত তিনি ছিলেন একজন মানব প্রেমিক। আজীবন তিনি সৃষ্টিকে ভালোবেসেছেন স্রষ্ঠার ভালোবাসা পাবার জন্য।

পরিশেষে তিনি তার সু যোগ্য সন্তান আলহাজ্ব আবদুর রহমান কে এম,পি বানিয়ে উখিয়া টেকনাফের মানুষের জন্য বদিকে কুরবান করে ৪ এপ্রিল ২০০৯সাল রোজ শনিবার বিধাতার ডাকে সাড়া দিলেন ।

অচিন পুরে গেলে তুমি চন্দ্র লোক ছেড়ে.
ফেরেস্তারা স্বাগত জানায় তোমায় হাত নেড়ে।

রচনায়: এম.এরশাদুর রহমান, খারাংখালী, টেকনাফ।